ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুর আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসে দীর্ঘ চার মাস আগে পাসপোর্ট করতে দিয়ে ঘুড়তে ঘুড়তে বড্ড বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন শহরের টেপাখোলার মইন বিশ্বাস। তার স্ত্রী অসুস্থ্য দ্রুত চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে যেতে হবে ভারতে। কিন্তু কিভাবে যাবেন চার মাস হতে চললো সোনার হরিন সেই পাসপোর্ট হাতে পাননি তিনি। প্রতিদিন পাসপোর্ট অফিসে তিনি আসেন অফিসের বড় কর্মকর্তার সাথে তো আর দেখা করতে পারেন না। অগত্যা তাকে নিচের কাউন্টারে খোঁজ নিযে ফিরে যেতে হয় পাসপোর্ট না পেয়ে।
ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিস এভাবে চলছে সদ্য যোগ দেয়া উপ-পরিচালক মো. নুরুল হুদা যোগ দেওয়ার পর থেকে। এরই মাঝে তার সরকারি টেলিফোন নাম্বার ০৬৩১-৬২৭৮৭ ও মোবাইল নাম্বার ০১৭৩৩-৩৯৩৩৪২ ব্যবহার করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ সেবা নিতে আসা মানুষেরা ভোগান্তিতে পড়লেও অভিযোগ করার জন্য তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কেউ দেখা করতে চাইলে তাদের পড়তে হয় তার রুমের সামনে থাকা আনসার কমিটির সদস্যদের খপ্পরে। এদের উৎপাত এতোটাই বেশী যে সাধারন মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন কি করবেন।
নুরুল হুদা ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ফরিদপুর পাসপোর্ট অফিসে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর থেকে গত চার মাসে পাসপোর্ট অফিসের সরকারি টেলিফোন ও মোবাইলে ওই উপ পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। মোবাইলটি এই চার মাস ধরে রিসিভ করেন অফিসের সুপারেটেন্ট শওকত আলী মোল্যা। তিনি এক আইনবাজ কর্মকর্তা বলে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। তবে সেই আইন অনেক সহজ হয় যদি তিনি তাদের কাছ থেকে খুশি হন। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে উপ-পরিচালক মো. নুরুল হুদা তার অফিসের সকল কাজ করান সুপারেটেন্ট শওকত আলী মোল্যাকে দিয়ে।
সেবা নিতে আসা প্রতাপ কুমার নামের এক ব্যক্তি জানান, দুই মাস ঘুরেও পাসপোর্ট পায়নি। অনেকে আবার বেশি টাকা দিয়ে পাসপোর্ট পাচ্ছে। এবিষয়ে কথা বলতে ডিডির রুমে গেলে শুনলাম তিনি ডিসি অফিসে মিটিং এ গেছেন। তারপর তার মোবাইলে ফোন করলে অন্য ব্যক্তি ধরেন। এভাবেই দিনের পর দিন ঘুরছি।
ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার পিতার চিকিৎসার জন্য দ্রæত ভারতে যেতে হবে। আমরা পাসপোর্ট করতে অফিসে আসলে জরুরী পাসপোর্ট করতে দিই এখানে থাকা এক ব্যক্তির কাছে। সাধারনত একটি জরুরী পাসপোর্ট করতে সাত হাজার টাকা লাগে। সেখানে তারা আমাদের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়েছে তারপরও ভাই দ্রুত লাগবে এই জন্য টাকা দিয়েছি। এখানে টাকা কোন সমস্যা নয়। এর আগে যে ডিডি ছিলেন মাসুম সাহেব তিনি অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তার রুম এবং ফোন দুটোই যে কেউ ইচ্ছা করলে কথা বলতে পারতো তার সাথে। এখন আর সেটা সম্ভব হয় না।
এক ভুক্তভোগী আলতাফ হোসেন বলেন, আমার কাগজ ঘষামাজা হওয়ায় জমা নেয়নি অফিস পরে এক আনসার সদস্য আমার কাছে ১২০০ টাকা দাবি করেন। আমি উর্ধতন কর্মকর্তাকে বলেও সেদিন কাগজপত্র জমা দিতে পারিনি।
পাসপোর্ট করতে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হজ্জ ও উমরার যাত্রীদেরও। বোয়ালমারী থেকে ওবায়দুর রহমান ও তার স্ত্রী হজ্জে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করতে এলে তাদেরকে নানা অযুহাত দেখিয়ে দালালের সহায়তা নিতে বলা হয়। এখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্য ও সংগঠিত দালাল চক্রের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চলে এই দুর্নীতি। পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ নানা বিষয়ের কথা বলে এখানে থাকা লোকজন তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে বলে জানান তার আত্মীয় আকবর আলী।
ফরিদপুরের সিনিয়র সাংবাদিক পান্না বালা বলেন, অফিস প্রধানের মোবাইল বা টেলিফোন অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে না। তার অধিনস্থ কাউকে দিয়েও ব্যবহার করানো যাবে না। সেবা দিতে এসে এভাবে দুরে থাকার মানে হয়না। এতে যদি কেউ তাকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে তা অমূলক নয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে তার সরকারী মোবাইলে কল দিলে ডিডি নুরুল হুদাকে পাওয়া যায়নি। আর এ সময় তার মোবাইলটি ধরে শওকত আলী বলেন, স্যার এই মোবাইলটি সব সময় ব্যবহার করেন না। তিনি বলেন স্যার ব্যস্ত থাকেন যে কারনে ফোন রাখেন না তার কাছে। কোন তথ্য থাকলে আমাকে বলেন। তিনি আরো বলেন এখানে অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়ার কথা আমার জানা নেই।
No comments:
Post a Comment